মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ তরুণ ও যুবগোষ্ঠী হলেও এদের মাঝে বেকারত্বের হার জাতীয় পর্যায়ের হারের দ্বিগুণ। এমন বাস্তবতায় দেশের অগ্রযাত্রায় বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে-কক্সবাজারের বহুমুখী ভাষা শিক্ষা, পরিবেশ, মানবিক কার্যক্রম নিয়ে নিরন্তর পথচলা কক্সবাজার হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিএইচআরডিএফ)।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ১২ আগস্ট সকালে কক্সবাজার শহরের কালুর দোকানস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে Cox’sbazar Human resource Development Foundation (CHRDF) এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার (সিএলসি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহবান জানান।
সিএলসি’র সাধারণ সম্পাদক মো: মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা আরো বলেন, টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিতকল্পে তাদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুবই দরকার।
“Intergenerational Solidarity : Creat a world for all age”এই প্রতিপাদ্য নিয়ে CHRDF এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মহি’র নির্দেশনায় অন্যান্যের মধ্যে সিএলসি’র সহ-সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া, যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মইনুল ইসলাম, অর্থ-সম্পাদক মিজবাউর রহমান, সহ অর্থ সম্পাদক শেফায়েত আলি, দপ্তর সম্পাদক মাকসুুদুল হক প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
কোরআন তেলাওয়াত এবং স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমেই শুরু হয় আলোচনা সভা। প্রথম পর্বে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী তাদের নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করেন। সদস্যদের বক্তব্য শেষে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন- সভার সভাপতি, ভাষা প্রশিক্ষক ও কক্সবাজার ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বিশ্ব যুব দিবসের পরিচিতি, তাৎপর্য, বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নে যুবকদের অবদান এবং টেকসই উন্নয়নে যুবকদের করণীয় সহ আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেন। তরুণদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি বর্তমান প্রজন্মকে সামাজিক এবং মানসিকভাবে সচেতন করার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত জনশুমারিকে বিবেচনায় নিলে তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীর হাত ধরে দারুণ এক জনমিতিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। যদিও সেই সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর করে এই বিপুল তারুণ্যকে কতটা কার্যকরভাবে দক্ষ করে কাজের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যাচ্ছে, তার ওপর।
মোঃ মাহবুবুর রহমান আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ-২০২২’ এর তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ। যেখানে জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার মাত্র ৪.২ শতাংশ। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা অতিমারির প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর বড় অংশই হচ্ছে তরুণ। কিন্তু বিপুল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে কর্ম উপযোগী করার বিষয়ে এখনও কোনও সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যা সত্যিই হতাশার। যদিও দেশের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, দেশে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। যার বড় কারণ হচ্ছে-কাজে যোগ দেবার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা যাচ্ছে না, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে। এই সমস্যাটি ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠলেও তা সমাধানে সমন্বিত কোনও উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি, যা সত্যিই উদ্বেগের।
বক্তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও বাজেট বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে প্রয়োজন বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী যুবকদের কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত, কারিগরি ও ভাষাগতভাবে দক্ষ করে তোলা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে না পারলে দেশের অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেনা।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করার আহবান জানিয়ে বক্তারা আরো বলেন, বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য দেশের স্বার্থে কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে।